image 17


কন্টুর বলতে কী বুঝায়?
 নির্দিষ্ট উপাত্ততল হতে সমউচ্চতা বিশিষ্ট বিভিন্ন বিন্দুর সংযোগকারী কাল্পনিক রেখাকে কন্টুর বলে। আর এ কন্টুর নকশায় অংকিত হলে কন্টুর রেখা বলে। কন্টুর (Contour) বলতে সাধারণত এমন একটি রেখাকে বোঝায় যা সমান উচ্চতা বা গুণমানের পয়েন্টগুলোকে যুক্ত করে। ভূগোল ও মানচিত্রের ক্ষেত্রে কন্টুর লাইনগুলি ভূ-প্রকৃতির উচ্চতা এবং অবকাঠামো নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়।
যেমন, টপোগ্রাফিক মানচিত্রে কন্টুর লাইনগুলি পাহাড়, উপত্যকা, নদী এবং অন্যান্য ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করে। যখন কন্টুর লাইনের দূরত্ব কম হয়, তখন সেই এলাকা খাড়া এবং যেখানে দূরত্ব বেশি, সেখানে এলাকা মসৃণ।
 
কটুরিং কী?
 যে কনটুরিং বা কটুরিং (Contouring) হল একটি জরিপ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ভূমির উঁচু-নিচু স্থানগুলোকে একটি সমতল মানচিত্রে প্রদর্শন করা হয়। কনটুরিংয়ের মাধ্যমে ভূমির উচ্চতার পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, যা প্রকৌশল, স্থাপত্য, কৃষি, এবং ভূতাত্ত্বিক জরিপে ব্যবহৃত হয়। কনটুরিংয়ের মাধ্যমে তৈরি মানচিত্রে ভূমির উচ্চতা নির্দেশ করতে “কনটুর লাইন” ব্যবহার করা হয়, যা নির্দিষ্ট উচ্চতার স্থানগুলোকে সংযুক্ত করে।
কনটুরিং-এর প্রধান উদ্দেশ্য:
ভূমির উঁচু-নিচু পরিবর্তনের মানচিত্র তৈরি করা।
ভূমির ঢাল এবং বক্রতা নির্ধারণ করা।
নির্মাণ প্রকল্পের জন্য সঠিক পরিকল্পনা এবং ডিজাইন তৈরি করা।
জলস্রোত এবং জল নিষ্কাশনের পথ নির্ধারণ করা।
কৃষি এবং বনায়ন পরিকল্পনার জন্য জমির সম্ভাবনা নির্ধারণ করা।
কনটুরিং-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য:
কনটুর লাইন:
সমান উচ্চতার স্থানগুলোকে একসঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য কনটুর লাইন ব্যবহার করা হয়।
পরপর কনটুর লাইনের মাঝে উচ্চতা পরিবর্তনের পরিমাণ সমান থাকে।
কনটুর ইন্টারভ্যাল:
এটি কনটুর লাইনের মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য নির্দেশ করে। উচ্চতা পার্থক্য যত কম, তত বেশি সংখ্যক কনটুর লাইন থাকবে।
পাহাড়ি বা উঁচু-নিচু ভূমিতে ইন্টারভ্যাল সাধারণত কম হয়, আর সমতল ভূমিতে বেশি হয়।
কনটুর লাইনের ঘনত্ব:
কনটুর লাইনের ঘনত্ব থেকে ভূমির ঢালের তীব্রতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ঘন ঘন কনটুর লাইন থাকলে, তা একটি খাড়া ঢাল নির্দেশ করে। এবং দূরে দূরে থাকলে, তা একটি মৃদু ঢাল নির্দেশ করে।
কনটুরিং-এর ব্যবহার:
নির্মাণ প্রকল্পে: রাস্তা, বাঁধ, সেতু, এবং ভবনের নকশায় ভূমির উঁচু-নিচু সম্পর্কে বিশদ ধারণা প্রদান করে।
ভূতাত্ত্বিক জরিপে: ভূমিকম্পের প্রভাব, মাটি স্খলনের সম্ভাবনা, এবং ভূমির গঠন বিশ্লেষণে সাহায্য করে।
কৃষিতে: ঢালের অবস্থান বুঝে সেচ ও নিষ্কাশন পরিকল্পনা করা যায়।
পর্যটন এবং মানচিত্র তৈরিতে: পাহাড়, নদী, এবং অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের অবস্থান এবং উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে।
উপসংহার:
কনটুরিং ভূমির উচ্চতা এবং ঢালের ধরন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে, যা সঠিক পরিকল্পনা এবং ডিজাইন তৈরিতে সহায়ক। এটি প্রকল্পগুলোর নিরাপদ ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করে এবং পরিবেশগতভাবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার জন্য অপরিহার্য।
 প্রক্রিয়া বা কলাকৌশলের সাহায্যে কন্টুর মানচিত্র বা কন্টুর নকশা তৈরি করা হয়, তাকে কন্টুরিং বলে।
 

image 18

কন্টুর প্রক্ষেপণ (Interpolation of Contours):
পরোক্ষ পদ্ধতিতে নকশায় অঙ্কিত ভূ-বিন্দুসমূহের মধ্যদিয়ে উচ্চতার আনুপাতিক বিচারে বিভিন্ন মানের কন্টুর রেখা অংকন প্রক্রিয়াকে কন্টুর প্রক্ষেপণ বলা হয়।
কন্টুর প্রক্ষেপণ (Contour Projection) বলতে এমন একটি পদ্ধতিকে বোঝায় যার মাধ্যমে কন্টুর লাইনগুলিকে একটি নির্দিষ্ট পৃষ্ঠে বা মানচিত্রে স্থানান্তর করা হয়। এই প্রক্ষেপণ প্রক্রিয়া সাধারণত ভূগোল, টপোগ্রাফি এবং স্থাপত্য ডিজাইন ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
কন্টুর প্রক্ষেপণের উদ্দেশ্য:
ভূ-প্রকৃতির বিশ্লেষণ: কন্টুর প্রক্ষেপণের মাধ্যমে ভূ-প্রকৃতির উচ্চতা, ঢাল, এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সহজে চিহ্নিত করা যায়।
নকশা উন্নয়ন: স্থাপত্য এবং প্রকৌশলে, কন্টুর প্রক্ষেপণ ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা এবং নকশা তৈরি করা হয়।
ম্যাপিং: মানচিত্রের ডিজাইন তৈরির সময়, কন্টুর প্রক্ষেপণ ভূ-প্রকৃতির সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে।
প্রক্ষেপণের পদ্ধতি:
শাখা বা সমান্তরাল প্রক্ষেপণ: যেখানে কন্টুর লাইনগুলি একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে সমান্তরালভাবে প্রক্ষেপিত হয়।
বৈজ্ঞানিক প্রক্ষেপণ: উচ্চতা, রেখা এবং বিন্দু সমন্বয় অনুযায়ী।
ফলাফল:
কন্টুর প্রক্ষেপণের মাধ্যমে প্রাপ্ত মানচিত্র বা ডিজাইনগুলি ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যগুলি সহজে বোঝার সুযোগ করে দেয় এবং বিভিন্ন প্রকল্পে সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করে।
 কন্টুর রেখার বৈশিষ্ট্য কি কি?
কন্টুর রেখা কতগুলি নিয়ম মানিয়া চলে যাহার বৈশিষ্ট্য নিম্নে বর্ণনা করা হইল।
(১) একই কন্টুর লাইনের উপরিস্থিত সকল বিন্দুই সমউচ্চতা বিশিষ্ট।
(২) সমুদ্রের দিকে ঝুঁকিয়া পড়া পাহাড়ের খাড়া ক্লিফ (Vertical clif) ছাড়া বিভিন্ন উচ্চতা বিশিষ্ট দুইটি কন্টুর লাইন কখনও পরস্পর মিলিত হইবে না বা বিভক্ত হইবে না।..
(৩) একটি কন্টুর লাইন হয় ইহার প্রান্তদ্বয় মিলিত হইবে নতুবা মানচিত্রের বাহিরে চলিয়া যাইবে কিন্তু মাঝখানে কখনও শেষ হইবে না।
(৪) কন্টুর লাইনের মধ্যবর্তী দূরত্ব ঢালের উল্টা অনুপাতে বাড়ে। কন্টুর লাইন পর্বত শীর্ষের সন্নিকটে কাছাকাছি থাকে এবং পর্বতের চূড়ার দিকে পর্বত গাত্র যে বেশী খাড়া থাকে তাহাই প্রকাশ করে। আর গোড়ার দিকে কন্টুর লাইন দূরে দূরে থাকে, এবং শীর্ষদেশের তুলনায় কম ঢালুতা প্রকাশ করে।
(৫) সুষম দূরত্বে অবস্থিত কন্টুর রেখা সমতল ভূমি নির্দেশ করে।
(৬) ধারাবাহিক বদ্ধ কন্টুর রেখা ভিতরের দিকে কটূরের মান বেশী বা কম অনুসারে যথাক্রমে পাহাড়, হদ বা নীচু এলাকা নির্দেশ করে।
 (৭) ধারাবাহিক কন্টুর লাইন কেন্দ্রের দিকে কন্টুরের মান কম বা বেশী অনুসারে যথাক্রমে জল নিষ্কাশন বা জল বিভাজিকা নির্দেশ করে।
 (৮) কন্টুর লাইন উপত্যকা বা অধিত্যকা লাইনকে সমকোণে ছেদ করে।
(৯) কন্টুর লাইন ভগ্ন বা টুকরা হইতে পারে না।
(১০) নদীর পানি সর্বদা স্থির থাকে না বলিয়া নদীর উপর দিয়া আড়াআড়ি কন্টুর লাইন টানা হয় না। তাই নদীর তলদেশ বা উপকূল বরাবর কন্টুর লাইন টানা হয়।
 
 
বেঞ্চমার্ক বলতে কী বুঝায়?
যে নির্দিষ্ট স্মারক বিন্দুর এলিভেশন বা আর এল জানা আছে তাকে বেঞ্চমার্ক বলে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থাপন করা হয়। বেঞ্চমার্ক (Benchmark) বলতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট মান, স্তর, বা পয়েন্টকে বোঝায় যা একটি পরিমাপের ভিত্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এখানে বেঞ্চমার্কের কিছু সাধারণ ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
ভূগোল এবং নির্মাণ: বেঞ্চমার্ক হল একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার পয়েন্ট যা সাধারণত মানচিত্র, নির্মাণ কাজ, বা ভূমি সমন্বয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় এবং অন্যান্য উচ্চতার পয়েন্ট নির্ধারণ করতে সহায়ক।
পারফরম্যান্স মাপ: ব্যবসায় এবং শিল্পে, বেঞ্চমার্ক ব্যবহার করা হয় একটি প্রতিষ্ঠানের পারফরম্যান্স, উৎপাদন, বা সেবার মান নির্ধারণ করতে। এখানে এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা শিল্পের গড় মানের সাথে তুলনা করা হয়।
প্রযুক্তি: সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার সিস্টেমের কার্যকারিতা নির্ধারণের জন্য বেঞ্চমার্ক টেস্ট করা হয়। এতে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক শর্তে সিস্টেমের কার্যকারিতা পরিমাপ করা হয়।
শিক্ষা: শিক্ষায়, বেঞ্চমার্ক ব্যবহার করা হয় শিক্ষার্থী বা শিক্ষার মান যাচাইয়ের জন্য। এখানে এটি পরীক্ষার ফলাফল বা শিক্ষার প্রোগ্রামের মান নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
বেঞ্চমার্ক ব্যবহারের উদ্দেশ্য হল একটি নির্দিষ্ট মান বা স্তরের ভিত্তিতে উন্নয়ন বা উন্নতির জন্য লক্ষ্যমাত্রা স্থাপন করা।
বেঞ্চমার্ক কত প্রকার ও কী কী?
 বেঞ্চমার্ক চার প্রকার, যথাঃ
i. জিটিএস বেঞ্চমার্ক
ii. স্থায়ী বেঞ্চমার্ক
iii. অস্থায়ী বেঞ্চমার্ক
iv. ধার্যকৃত বেঞ্চমার্ক
 

image 19

নতুন প্রকল্পের জন্য বেঞ্চমার্কের গুরুত্ব
নতুন প্রকল্পের জন্য বেঞ্চমার্কের (Benchmark) গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে মাপ এবং উচ্চতা সম্পর্কিত তথ্যের জন্য নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। বেঞ্চমার্ক সাধারণত নির্দিষ্ট একটি স্থানে স্থাপন করা হয় এবং এটি প্রকল্প এলাকায় স্থানের উচ্চতা, সঠিক মাপ, এবং অন্যান্য জরিপের তথ্যের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নতুন প্রকল্পের জন্য বেঞ্চমার্কের গুরুত্ব:
১. প্রাথমিক উচ্চতা এবং স্তরের নির্ধারণ:
প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন পয়েন্টের উচ্চতা নির্ধারণ করতে বেঞ্চমার্কের রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়।
এটি নিশ্চিত করে যে প্রকল্পের উচ্চতা সংক্রান্ত ডেটা সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য।
২. মাপের নির্ভুলতা নিশ্চিত করা:
বেঞ্চমার্ক নির্দিষ্ট এবং স্থায়ী রেফারেন্স পয়েন্ট হওয়ায়, বিভিন্ন পর্যায়ে সঠিক পরিমাপের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
জরিপ এবং নির্মাণের সময় সঠিকতা বজায় রাখতে সহায়ক, যা প্রজেক্টের সফল বাস্তবায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. সততা বজায় রাখা:
বেঞ্চমার্কের মাধ্যমে মাপের প্রাথমিক স্তর ও উচ্চতা রেফারেন্স করা যায়, যা পুরো প্রকল্পের জন্য স্থায়ী রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এটি প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে মাপ ও স্তরের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখে।
৪. জরিপের তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে জরিপের মাধ্যমে বেঞ্চমার্কের সাহায্যে মাপের পার্থক্য এবং পরিবর্তন নির্ণয় করা যায়।
প্রকল্প এলাকায় কোন পরিবর্তন হয়েছে কি না, বা কোন বিশেষ পদক্ষেপ প্রয়োজন কি না তা যাচাই করতে সহায়ক।
৫. নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঠিকতা:
নির্মাণ প্রকল্পে সঠিক স্তর এবং উচ্চতা নিশ্চিত করার জন্য বেঞ্চমার্কের রেফারেন্স প্রয়োজন।
এটি নির্মাণকারীদের নির্দিষ্ট মানদণ্ড বজায় রাখতে সাহায্য করে, যাতে সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়।
৬. আঞ্চলিক সংযুক্তি নিশ্চিত করা:
প্রকল্প এলাকায় স্থানীয় এবং আঞ্চলিক স্তরে সংযুক্তির জন্য বেঞ্চমার্কের গুরুত্ব অপরিহার্য।
বেঞ্চমার্ক বিভিন্ন স্থানীয় জরিপ বা প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সঠিক স্থাপনা নির্ধারণে সহায়ক।
উপসংহার:
নতুন প্রকল্পে বেঞ্চমার্কের ব্যবহার নিশ্চিত করে যে প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং মাপ ও উচ্চতার বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না। বেঞ্চমার্ক নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স হিসেবে প্রকল্পের সঠিকতা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকর প্রকল্প নির্মাণে অত্যন্ত সহায়ক।

image 20

কন্টুর রেখা (Contour lines):
ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে বিদ্যমান সম-উচ্চতা বিশিষ্ট বিভিন্ন বিন্দু সংযোজক কল্পিত রেখাকে কন্টুর রেখা (Contour lines) বলে। ইহা এমন ধরনের রেখা, যা ভূমিতল কোন নির্দিষ্ট উচ্চতা (Level) দ্বারা ছেদিত হয়। একমাত্র কন্টুর মাধ্যমেই সবচেয়ে নির্ভুলভাবে রিলিফ চিত্রায়ন করা যায় এবং এ কারণে এ প্রক্রিয়া সচরাচর ব্যবহার করা হয়। কারণ কন্টুর রেখা কেবলমাত্র এলাকার ভূ- সংস্থান (Topography) সম্পর্কে আপেক্ষিক ধারণাই প্রদান করে না বরং ভূমি পৃষ্ঠের উচ্চতা সম্পর্কেও সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করে
কিভাবে কন্টুর মানচিত্র তৈয়ার করা হয়? উহার বিশেষত্ব কি?
কন্টুর বিন্দুসমূহ (ভূমিতে কন্টুরের উপরিস্থিত বিন্দু) সংযোগকারী কন্টুর লাইন অংকন করিয়া কন্টুর মানচিত্র অংকন করা হয় অর্থাৎ কন্টুর লাইন সম্বলিত ম্যাপকে কন্টুর মানচিত্র বলা হয়। বিভিন্ন কন্টুর বিন্দুর উচ্চতা কন্টুর লাইনের পার্শ্বে লেখা থাকে।
কন্টুর ম্যাপ পর্যালোচনা করিয়া কোন বিস্তৃত এলাকার বৈশিষ্ট্য-যেমন, পাহাড়, পর্বত গিরিপথ, উপত্যকার প্রকৃতি, ঢালুতা, বন্ধুরতা ও অন্যান্য নীচু এলাকা, নদনদী ইত্যাদি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। কন্টুর লাইন সাধারণত সমান খাড়া বিরতিতে অংকন করা হয়।
কটূরের প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে
ডেটা সংগ্রহ: কন্টুর মানচিত্র তৈরির প্রথম ধাপ হল উপাদানের উচ্চতা এবং ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। এটি ফিল্ড সার্ভে, উচ্চতা পরিমাপ এবং ভূতাত্ত্বিক তথ্যের মাধ্যমে করা হয়।
পয়েন্ট ম্যাপিং: বিভিন্ন পয়েন্টে (উচ্চতা ও স্থানীয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী) ডেটা সংগ্রহের পর, প্রতিটি পয়েন্টের জন্য উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়।
কন্টুর লাইন আঁকা: সমান উচ্চতার পয়েন্টগুলোকে যুক্ত করে কন্টুর রেখা আঁকা হয়। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে (যেমন ৫ মিটার বা ১০ মিটার) কন্টুর রেখাগুলি আঁকা হয়।
ফাইনালাইজেশন: কন্টুর লাইনগুলি আঁকার পর মানচিত্রটি পরিশোধিত করা হয়। এখানে অতিরিক্ত তথ্য যেমন নদী, রাস্তা, এবং অন্যান্য ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যগুলি যুক্ত করা হয়।
প্রিন্টিং ও প্রকাশনা: শেষের দিকে, কন্টুর মানচিত্রটি প্রিন্ট করা হয় বা ডিজিটাল ফর্মে প্রকাশ করা হয়।
কন্টুর মানচিত্রের বিশেষত্ব:
ভূ-প্রকৃতির বিশ্লেষণ: কন্টুর মানচিত্র ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যগুলি সহজে বিশ্লেষণ করতে সহায়ক। এটি পাহাড়, উপত্যকা, নদী ইত্যাদি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
অভিযোজন পরিকল্পনা: এটি শহুরে উন্নয়ন, কৃষি, এবং পরিবহন পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষাগত উদ্দেশ্য: ভূগোল শিক্ষা ও গবেষণায় কন্টুর মানচিত্র ব্যবহৃত হয়, যা শিক্ষার্থীদের ভূ-প্রকৃতি বুঝতে সাহায্য করে।
নির্মাণ ও প্রকৌশল: নির্মাণ প্রকল্পগুলিতে কন্টুর মানচিত্রগুলি ভূমির পরিকল্পনা ও স্থাপত্য ডিজাইনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
দৃশ্যমানতা: কন্টুর মানচিত্রগুলি বিভিন্ন উচ্চতার পরিবর্তনগুলি দৃশ্যমানভাবে দেখায়, যা ব্যবহারকারীদের জন্য তথ্য বোঝা সহজ করে।

Write the full form?
H.F.L = Highest Flood Level
B.M= Bench Mark
F.L-Formation Level
M.S.L Mean Sea Level
G.T.S =Great Trigonometrical Survey
R.L = Reduced Level
T.B.M= Temporary Becnh Mark
কনট্যুর সার্ভে কি?
কনট্যুর সার্ভে দুই ধরনের ব্যবহার আছে যা হয়
 
(ক) ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে
(খ) সাধারণ ব্যবহার
 
কনট্যুর সার্ভে (Contour Survey) হল একটি বিশেষ ধরনের জরিপ পদ্ধতি, যা ভূ-প্রকৃতির উচ্চতা এবং গঠন বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সার্ভেতে ভূ-প্রকৃতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন পাহাড়, উপত্যকা, নদী এবং অন্যান্য ভূমি গঠনকে চিহ্নিত করার জন্য কন্টুর লাইন তৈরি করা হয়।
কনট্যুর সার্ভের প্রক্রিয়া:
তথ্য সংগ্রহ: কনট্যুর সার্ভেতে প্রথমে ভূ-প্রকৃতির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্য সাধারণত উচ্চতা, ভূমির গঠন এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হয়। এটি ফিল্ড সার্ভে, জিপিএস এবং অন্যান্য প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হয়।
কন্টুর পয়েন্ট নির্ধারণ: সার্ভে চলাকালীন, বিভিন্ন পয়েন্টে উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়। এই পয়েন্টগুলো সাধারণত সমান উচ্চতার স্তরে থাকে।
কন্টুর লাইন আঁকা: সমান উচ্চতার পয়েন্টগুলোকে সংযুক্ত করে কন্টুর লাইন আঁকা হয়। এই রেখাগুলি ভূ-প্রকৃতির উচ্চতা এবং ঢাল চিত্রিত করে।
মানচিত্র তৈরি: কন্টুর লাইনগুলির উপর ভিত্তি করে একটি কন্টুর মানচিত্র তৈরি করা হয়, যা স্থানীয় ভূ-প্রকৃতির সঠিক প্রতিনিধিত্ব করে।
কনট্যুরের বৈশিষ্ট্য
কনট্যুর বা কন্টুর লাইনগুলির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ভূ-প্রকৃতির উচ্চতা এবং গঠন বিশ্লেষণে সহায়ক। এখানে কনট্যুরের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো:
সমান উচ্চতা: কনটুর লাইনগুলি সমান উচ্চতার পয়েন্টগুলোকে সংযুক্ত করে। অর্থাৎ, কনটুর লাইনের প্রতিটি পয়েন্ট একই উচ্চতা নির্দেশ করে।
সমান্তরালতা: কনটুর লাইনগুলি সাধারণত একে অপরের সাথে সমান্তরাল থাকে। যখন দুইটি কনটুর লাইন কাছাকাছি থাকে, তখন এটি নির্দেশ করে যে এলাকা খাড়া এবং যখন দূরে থাকে, তখন এলাকা মসৃণ।
কোণ এবং বাঁক: কনটুর লাইনগুলির বাঁক এবং কোণগুলি ভূ-প্রকৃতির গঠন এবং ঢাল নির্দেশ করে। যেসব স্থানগুলি বাঁকা কনটুর রেখা তৈরি করে, সেগুলো সাধারণত ঢালু এবং জটিল ভূমি গঠন নির্দেশ করে।
আনুপাতিক দূরত্ব: কনটুর লাইনের মধ্যে দূরত্বের পরিবর্তন এলাকা ও ঢালের পরিবর্তন নির্দেশ করে। যেমন, কনটুর লাইনের মধ্যে দূরত্ব কম হলে তা নির্দেশ করে যে এলাকা বেশি খাড়া এবং বেশি দূরত্ব থাকলে এলাকা মসৃণ।
নদী ও জলাভূমির চিহ্ন: কনটুর লাইনগুলি নদী ও জলাভূমির অবস্থান নির্দেশ করে। সাধারণত কনটুর লাইনগুলি নদীর দিকে দিকে ভাঙে, যা পানির প্রবাহের দিক নির্দেশ করে।
উচ্চতা নির্ধারণ: কনটুর মানচিত্রে সাধারণত কনটুর লাইনের পাশে উচ্চতা উল্লেখ থাকে, যা ব্যবহারকারীদের কনটুরের উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
স্থানীয় বৈশিষ্ট্য: কনটুর লাইনগুলির সঙ্গে অন্যান্য ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য যেমন পাহাড়, উপত্যকা এবং সমভূমির অবস্থানও চিহ্নিত করা হয়।
উপসংহার
কনট্যুর সার্ভে এবং কনটুরের বৈশিষ্ট্যগুলি ভূ-প্রকৃতির সঠিক বিশ্লেষণ এবং গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কনটুর মানচিত্রগুলি ভূগোল, স্থাপত্য, এবং প্রকৌশলে ব্যবহার করা হয়, যা প্রকল্পের নকশা এবং উন্নয়নে সহায়ক।
 

image 21


 
নতুন প্রকল্পের জন্য কনট্যুর সার্ভের গুরুত্ব
নতুন প্রকল্পের জন্য কনট্যুর সার্ভের গুরুত্ব অনেক বেশি, কারণ এটি জমির উচ্চতা, ঢাল এবং অন্যান্য ভূ-প্রকৃতি সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করে। কনট্যুর সার্ভে ভূমির সঠিক মানচিত্র তৈরি এবং প্রকল্পের পরিকল্পনা ও নকশায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে কনট্যুর সার্ভের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
১. ভূমির উচ্চতা এবং ঢাল নির্ধারণ
কনট্যুর সার্ভের মাধ্যমে ভূমির উচ্চতা ও ঢাল নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে প্রকল্পের পরিকল্পনা ও নির্মাণের সময় জমির বৈশিষ্ট্য বুঝতে সহায়ক হয়।
২. সঠিক মানচিত্র তৈরি
কনট্যুর সার্ভের মাধ্যমে ভূমির বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করা হয়, যা প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক মানচিত্র ব্যবহার করে প্রকল্পের নকশা এবং পরিকল্পনা করা যায়।
৩. সাইট সিলেকশন
নতুন প্রকল্পের জন্য সাইট সিলেকশনের সময় কনট্যুর সার্ভে অপরিহার্য। এটি একটি উপযুক্ত সাইট নির্বাচন করতে সহায়ক, যেখানে প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব।
৪. জলপ্রবাহ ও নিকাশের পরিকল্পনা
কনট্যুর সার্ভে জলপ্রবাহ এবং নিকাশ ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জমির ঢাল বিশ্লেষণ করে বৃষ্টির পানি কোথায় প্রবাহিত হবে তা নির্ধারণে সহায়ক হয়।
৫. পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ
নতুন প্রকল্পের জন্য পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণে কনট্যুর সার্ভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি প্রকল্পের পরিবেশের ওপর প্রভাব বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে, যা টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
৬. নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি
নতুন প্রকল্পের নির্মাণের জন্য কনট্যুর সার্ভে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সহায়ক। এটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে সহায়ক তথ্য সরবরাহ করে।
৭. সমস্যা চিহ্নিতকরণ
কনট্যুর সার্ভে মাধ্যমে জমির মধ্যে সম্ভাব্য সমস্যা যেমন ভূমিধস, বন্যা প্রবণ এলাকা ইত্যাদি চিহ্নিত করা যায়। এতে প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে সহায়ক হয়।
৮. স্থানীয় উন্নয়ন
কনট্যুর সার্ভে স্থানীয় উন্নয়নের পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি কৃষি, নগর পরিকল্পনা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে।
উপসংহার
নতুন প্রকল্পের জন্য কনট্যুর সার্ভের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি জমির সঠিক বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা করতে সহায়ক, যা প্রকল্পের সফলতা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
 

image 22


 
কনটুর সার্ভের ব্যবহার
কনটুর সার্ভে (Contouring Survey) ভূমির উচ্চতা এবং ঢাল সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের একটি প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন প্রকৌশল, নির্মাণ, এবং কৃষি প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কনটুর সার্ভে প্রধানত ভূমির টপোগ্রাফি চিহ্নিত করতে এবং একটি অঞ্চলের কনটুর ম্যাপ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। নিচে কনটুর সার্ভে ব্যবহারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হল:
কনটুর সার্ভের ব্যবহার:
১. ভূমির উচ্চতা ও ঢাল নির্ধারণ:
কনটুর সার্ভের মাধ্যমে ভূমির উঁচু-নিচু স্থানগুলো নির্ধারণ করা হয়, যা ভূমির ঢাল এবং বক্রতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।
এটি বিশেষ করে নির্মাণ প্রকল্প, রাস্তা, এবং বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয়।
২. নির্মাণ প্রকল্পের পরিকল্পনা:
কনটুর সার্ভের তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা ও ডিজাইন তৈরি করা হয়।
এটি নিশ্চিত করে যে নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং প্রযুক্তি সঠিকভাবে নির্বাচিত হবে।
৩. জল নিষ্কাশন ও সেচ ব্যবস্থা:
কনটুর সার্ভে মাধ্যমে জমির ঢাল বিশ্লেষণ করে জল নিষ্কাশনের সঠিক পথ নির্ধারণ করা যায়।
কৃষির জন্য সেচ পরিকল্পনা তৈরিতে এটি সাহায্য করে, যাতে জমিতে জল সঠিকভাবে বিতরণ করা যায়।
৪. বনায়ন ও পরিবেশ পরিকল্পনা:
কনটুর সার্ভের তথ্য ব্যবহার করে বনায়ন এবং অন্যান্য পরিবেশগত প্রকল্প পরিকল্পনা করা হয়।
এটি স্থানীয় পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক।
৫. ভূগর্ভস্থ জল নিরীক্ষণ:
কনটুর সার্ভে করে স্থানীয় ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবস্থা নির্ধারণ করা যায়, যা জলাধার ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৬. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন:
কনটুর সার্ভের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূমির উচ্চতা ও ঢালে কী প্রভাব পড়ছে তা বিশ্লেষণ করা যায়।
৭. ম্যাপিং এবং মানচিত্র তৈরি:
কনটুর সার্ভে ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানীয় মানচিত্র তৈরি করা হয়, যা ভূ-গবেষণায় এবং পর্যটন ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়।
৮. ভূগর্ভস্থ সম্পদের অনুসন্ধান:
কনটুর সার্ভের মাধ্যমে খনিজ, তেল, এবং অন্যান্য ভূগর্ভস্থ সম্পদ অনুসন্ধানে সহায়তা করা হয়।
(ক) ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে:
(1) একইভাবে এটি রাস্তা, রেলপথ, খাল, জল সরবরাহ, পাইপলাইন, বাঁধ, নিষ্কাশন ইত্যাদির মতো ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত এবং সুবিধাজনক স্থান নির্বাচন করতে সহায়তা করে।
(2) মাটি ভরাট করা বা কাটা মাটির পরিমাণ নির্ধারণ করা।
(3) প্রকৌশলীকে একটি দেশ বা এলাকার যেকোনো দিক বরাবর প্রোফাইল নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
(4) ড্রেনেজ বা ক্যাচমেন্ট এলাকার পরিকল্পনার জন্য, বন্ধ জলাধারের ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য কনট্যুর সার্ভের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
(5) দামী মাটি কাটার থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পেতে হয় সে সম্পর্কে ধারণা পেতে।
(6) কনট্যুর মানচিত্রে একটি নির্দিষ্ট ঢাল বরাবর রুট সনাক্ত করতে কার্যকর।
(7) কনট্যুর মানচিত্র থেকে আঁকা সহজ।
(8) এটি নির্মাণ এবং ভিত্তির গভীরতায় সাহায্য করে।
 
 
(খ) সাধারণ ব্যবহার:
(1) কনট্যুর মানচিত্রের সাহায্যে, একটি অঞ্চলের সাধারণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান প্রাপ্ত হয়।
(2) একটি কনট্যুর মানচিত্র থেকে, কেউ পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপরে বা এক বিন্দু নীচের আপেক্ষিক উচ্চতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
(3) এটি দুটি পয়েন্টের অন্তর্দৃষ্টি নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।
(4) কনট্যুর মানচিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি ত্রিমাত্রিক। আসলে, কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প একটি কনট্যুর মানচিত্রের উপর নির্ভর করে।
তাছাড়া পেশাদারদের ক্রমাগত সমর্থন সহ। উপরন্তু আমরা ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী কনট্যুর সার্ভে পরিষেবার একটি বিস্তৃত অ্যারে অফার করছি। প্রকৃতপক্ষে এটি ছাড়াও, আধুনিক প্রযুক্তি, সরঞ্জাম ব্যবহার করে, আমরা আমাদের গ্রাহকদের জন্য ফ্লোর তৈরি করি।
উপসংহার:
কনটুর সার্ভে বিভিন্ন প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ভূমির বিশেষ বৈশিষ্ট্য, ঢাল এবং উচ্চতা সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করে, যা সঠিক ডিজাইন এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য অপরিহার্য। কনটুর সার্ভে ব্যবহারের মাধ্যমে নির্মাণ, কৃষি, পরিবেশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
টোটাল স্টেশন দিয়ে কনট্যুর সার্ভে উপকারিতা
টোটাল স্টেশন দিয়ে কনট্যুর সার্ভে করার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে যা ভূমির উচ্চতা ও নিম্নতা নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রকল্প পরিকল্পনা, ভূমি উন্নয়ন এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর। নিচে এর কিছু প্রধান উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
টোটাল স্টেশন দিয়ে কনট্যুর সার্ভের উপকারিতা
১. উচ্চ নির্ভুলতা:
টোটাল স্টেশন দিয়ে জমির প্রতিটি স্থানের সুনির্দিষ্ট উচ্চতা পরিমাপ করা যায়। এতে কনট্যুর লাইনের মাধ্যমে ভূমির প্রকৃত অবস্থা নির্ভুলভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়।
২. বিস্তারিত মানচিত্রন:
টোটাল স্টেশন দিয়ে জমির বিভিন্ন পয়েন্টের উচ্চতা নিয়ে সঠিক কনট্যুর মানচিত্র তৈরি করা যায়, যা প্রকল্প সাইটের ত্রিমাত্রিক অবস্থা বুঝতে সাহায্য করে।
৩. প্রকল্প পরিকল্পনা এবং নকশা প্রণয়ন সহজতর করে:
টোটাল স্টেশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত কনট্যুর ডেটা ব্যবহার করে সহজেই ভূমি উন্নয়ন এবং নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও নকশা তৈরি করা সম্ভব হয়।
৪. প্রাকৃতিক বাধা ও বাঁধের চিহ্নিতকরণ:
কনট্যুর সার্ভের মাধ্যমে ভূমির উঁচু-নিচু অংশ চিহ্নিত করা যায়, যা প্রাকৃতিক বাধা, জলাশয়, এবং বাঁধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে।
৫. জমি ভরাট ও খননের সঠিক পরিমাপ:
ভূমি উন্নয়ন বা নির্মাণের সময় কতটুকু মাটি ভরাট বা খনন প্রয়োজন হবে, তা কনট্যুর লাইনের সাহায্যে নির্ধারণ করা যায়।
৬. কম সময়ে কার্যকর তথ্য সংগ্রহ:
টোটাল স্টেশন দ্রুত কাজ করে এবং অল্প সময়ে বড় আকারের জমির কনট্যুর ডেটা সংগ্রহ করতে সক্ষম, ফলে প্রকল্প দ্রুত শুরু করা সম্ভব হয়।
৭. ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ:
কনট্যুর সার্ভে থেকে সংগৃহীত ডেটা ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণ করা যায় এবং কম্পিউটারে সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়, যা ডেটার নিরাপত্তা এবং নির্ভুলতা বাড়ায়।
৮. সাইটের তিন-ডাইমেনশনাল (3D) মডেলিং:
টোটাল স্টেশন দিয়ে সংগৃহীত ডেটা ব্যবহার করে ভূমির 3D মডেল তৈরি করা যায়, যা সাইটের পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেয় এবং কনট্যুর সার্ভে আরও কার্যকর করে তোলে।
উপসংহার:
টোটাল স্টেশন দিয়ে কনট্যুর সার্ভে করা দ্রুত, নির্ভুল এবং দক্ষ একটি প্রক্রিয়া। এটি ভূমি উন্নয়ন, নির্মাণ এবং প্রকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। কনট্যুর সার্ভের মাধ্যমে প্রকল্প সাইটের ভূমির সঠিক উচ্চতা, নিম্নতা, এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে প্রকল্পকে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়।
ড্রোন দিয়ে কনট্যুর সার্ভের উপকারিতা
কনট্যুর সার্ভে করা বর্তমানে একটি অত্যাধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি, যা দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে ভূমির কনট্যুর ডেটা সংগ্রহ করতে সহায়ক। এটি বিভিন্ন প্রকারের প্রকল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন অবকাঠামো নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন এবং পরিবেশগত বিশ্লেষণ। নিচে ড্রোন দিয়ে কনট্যুর সার্ভে করার কিছু প্রধান উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
ড্রোন দিয়ে কনট্যুর সার্ভের উপকারিতা:
১. দ্রুত ডেটা সংগ্রহ:
ড্রোন ব্যবহার করে বড় এলাকা খুব অল্প সময়ে কভার করা যায়। এতে কম সময়ে বিশাল এলাকার কনট্যুর ডেটা সংগ্রহ সম্ভব, যা অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় অনেক দ্রুত।
২. উচ্চ নির্ভুলতা:
ড্রোনে থাকা উন্নত সেন্সর এবং ক্যামেরা ভূমির সুনির্দিষ্ট উচ্চতা এবং কনট্যুর ডেটা সংগ্রহে সক্ষম, যা 3D ম্যাপ এবং মডেলিংয়ের জন্য উপযোগী।
৩. ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে সহজ অ্যাক্সেস:
পাহাড়ি বা দূর্গম অঞ্চলে যেখানে সরাসরি পৌঁছানো কঠিন, সেখানে ড্রোন সহজে উড়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এতে মানব শ্রম ও নিরাপত্তার ঝুঁকি কমে যায়।
৪. ব্যয় সাশ্রয়ী:
ড্রোন সার্ভের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে কম খরচে কাজ করা সম্ভব, কারণ এটি কম জনবল এবং সময়ের প্রয়োজনীয়তা কমায়। বড় প্রজেক্টের জন্য এটি একটি কার্যকরী সমাধান।
৫. থ্রিডি (3D) মডেলিং এবং বিশ্লেষণ:
ড্রোনের মাধ্যমে সংগৃহীত ডেটা ব্যবহার করে ভূমির 3D মডেল তৈরি করা যায়, যা সাইটের পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রদান করে এবং সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়ক।
৬. পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি:
ড্রোন দিয়ে জরিপ করতে কোনো ধরনের ভূমি খনন বা সাইটের অন্যান্য প্রভাবিত পরিবর্তন প্রয়োজন হয় না, ফলে এটি পরিবেশ-বান্ধব একটি পদ্ধতি।
৭. সময়ের সাশ্রয়:
ড্রোন দিয়ে কনট্যুর সার্ভে করলে দ্রুত ডেটা সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব, যা প্রজেক্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ের সাশ্রয় নিশ্চিত করে।
৮. নিয়মিত মনিটরিংয়ের সুবিধা:
ড্রোন ব্যবহার করে একটি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা সহজ, ফলে প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও পরিবর্তন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
উপসংহার:
ড্রোন দিয়ে কনট্যুর সার্ভে অত্যন্ত দ্রুত, নির্ভুল এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি যা নির্মাণ ও ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পে উচ্চমানের তথ্য প্রদান করে। ড্রোনের মাধ্যমে কনট্যুর ডেটা সহজে বিশ্লেষণ করা যায় এবং প্রকল্পকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্ভুলতার ওপর নির্ভর করে সফলতার সম্ভাবনা বাড়ায়।
 
কনট্যুর লাইন প্রস্তুতির আমাদের পরিষেবা এলাকা
কনটুর লাইন প্রস্তুতির জন্য পরিষেবা এলাকা সাধারণত নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়:
১. ভূমি জরিপ:
কনটুর লাইন প্রস্তুতির জন্য সঠিক ভূমি জরিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ডিজিটাল টপোগ্রাফিক ম্যাপ তৈরির জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সার্ভে টেকনোলজি যেমন টোটাল স্টেশন, GPS, এবং লিডার ব্যবহৃত হয়।
২. নির্মাণ প্রকৌশল:
নির্মাণ প্রকল্প যেমন সেতু, রাস্তা, এবং ভবনের জন্য কনটুর লাইন প্রস্তুতি অপরিহার্য। এটি প্রকল্পের সঠিক ডিজাইন এবং পরিকল্পনার জন্য সহায়ক।
৩. কৃষি এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা:
কৃষি ক্ষেত্রেও কনটুর লাইন ব্যবহার করা হয়। এটি সেচ ব্যবস্থা, জল নিষ্কাশন এবং মাটি সংরক্ষণের জন্য কার্যকরী।
৪. পরিবেশগত বিশ্লেষণ:
কনটুর লাইন পরিবেশগত বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়, যা প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নির্ধারণ করতে সহায়ক।
৫. ভূগর্ভস্থ সম্পদের অনুসন্ধান:
কনটুর সার্ভের মাধ্যমে খনিজ, তেল, এবং অন্যান্য ভূগর্ভস্থ সম্পদের অবস্থান নির্ধারণ করা যায়।
৬. মানচিত্র প্রস্তুতি:
কনটুর লাইন ভিত্তিক মানচিত্র তৈরি করা হয়, যা পর্যটন এবং ভূ-গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।
৭. শহর পরিকল্পনা:
শহরের উন্নয়ন এবং পরিকল্পনার জন্য কনটুর লাইন প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। এটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সড়ক নকশার জন্য সহায়ক।
৮. জলবায়ু পরিবর্তনের গবেষণা:
কনটুর লাইন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং ভূমির পরিবর্তন বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার:
কনটুর লাইন প্রস্তুতির পরিষেবা এলাকা বহুবিধ এবং এটি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভূমির উচ্চতা, ঢাল এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে, কনটুর সার্ভে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিকল্পনার জন্য অপরিহার্য। এই পরিষেবার মাধ্যমে প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন এবং দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নিশ্চিত করা সম্ভব।
 
 
কন্টুর বিরতি ও অনুভূমিক সমতুল বলিতে কি বুঝ? কন্টুর বিরতি মান কি কি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।

পরস্পর দুইটি কন্টুর লাইনের মধ্যবর্তী খাড়া দূরত্বকে কন্টুর বিরতি বলে ইহার মান একবার যাহা ধরা হয় সমস্ত জরিপ কার্যে তাহা ঠিক থাকে আর পর পর দুইটি কন্টুর লাইনের মধ্যবর্তী অনুভূমিক দূরত্বকে অনুভূমিক সমতুল বলা হয়। ঢালের তারতম্য অনুসারে ইহার মানেরও তারতম্য ঘটে অর্থাৎ ইহার মান সর্বত্র সমান থাকে না। কন্টুর বিরতি নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
(১) জরিপতব্য এলাকার ভূপ্রকৃতি সমতল, উঁচু, নীচু কিংবা ঢালু
(২) জরিপের উদ্দেশ্যে ও ব্যাপ্তি
(৩) মানচিত্রের স্কেল (৪) জরিপের জন্য নির্দিষ্ট সময় ও খরচের পরিমাণ
(৫) সূক্ষ্মতার মাত্রা, ভূপৃষ্ঠের বন্ধুরতা বেশী বা কম হইলে কন্টুর বিরতি যথাক্রমে বেশী বা কম হইবে আর বন্ধুরতা কম বা বেশী হইলে কন্টুর বিরতি যথাক্রমে কম বা বেশী ধরা হয়। আবার মানচিত্র অংকনের স্কেল ছোট বা বড় হইলে কন্টুর বিরতি বেশি বা কম হইবে। সকল প্রকৌ শলী কাজের জন্য কন্টুর বিরতি ২-৩ মিঃ (৫-১০ ফুট) পার্বত্য এলাকার জন্য ২০-৩০ মিটার- (৫০-১০০ ফুট। বাস্তু সংস্থাপনের জন্য ০.২৫-০.৫ মিটার (১-২ ফুট) ধরা হয়।
 
মাঠে কিভাবে গ্রেড কন্টুর স্থাপন করিবে?
মাঠে গ্রেড কন্টুর স্থাপন (Contour Grading) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা ভূমির উঁচু-নিচু পরিবর্তন এবং ঢাল নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করা হয়। নিচে গ্রেড কন্টুর স্থাপন করার প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হলো:
১. প্রাথমিক প্রস্তুতি:
জরিপ ও পরিকল্পনা: প্রথমে স্থানীয় এলাকার একটি জরিপ করা হয়। টোটাল স্টেশন, লেভেলিং যন্ত্র বা GPS ব্যবহার করে উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়।
কনটুর মানচিত্র তৈরি: সার্ভের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে কনটুর মানচিত্র তৈরি করা হয়।
২. সাইটে জরিপ:
বেঞ্চমার্ক স্থাপন: সাইটে একটি বেঞ্চমার্ক (বেস পয়েন্ট) স্থাপন করা হয়, যা সব কন্টুরের রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে।
উচ্চতা মাপা: বেঞ্চমার্ক থেকে বিভিন্ন স্থানে উচ্চতা মাপা হয়। এতে কনটুর লাইন নির্ধারণের জন্য সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
৩. কন্টুর লাইন চিহ্নিতকরণ:
কন্টুর লাইনের পরিকল্পনা: কনটুর লাইনগুলি সাধারণত সমান উচ্চতার উপর নির্ভর করে তৈরি হয়। প্রতিটি কনটুর লাইন একে অপরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ থাকতে হবে।
লাইনের চিহ্নিতকরণ: মাঠে কনটুর লাইনগুলি চিহ্নিত করতে stakes, ফ্ল্যাগ, বা স্প্রে পেন্ট ব্যবহার করা হয়।
৪. গ্রেডিং প্রক্রিয়া:
মাটি খনন ও সমতল করা: কনটুর লাইনের অনুযায়ী মাটি খনন এবং সমতল করতে যন্ত্রপাতি (যেমন বুলডোজার বা গ্রেডার) ব্যবহার করা হয়।
উঁচু-নিচু স্থানগুলো সমন্বয়: মাটি খননের পরে, উঁচু এবং নিচু স্থানগুলো সমন্বয় করে কনটুর লাইনগুলো নিশ্চিত করা হয়।
৫. ফাইনাল টেস্ট এবং যাচাই:
উচ্চতা যাচাই: শেষ পর্যায়ে, কন্টুর লাইনের উচ্চতা আবার যাচাই করা হয়, যাতে সঠিকতা নিশ্চিত হয়।
পরিবর্তন ও সংশোধন: যদি কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়, তবে সংশোধন করা হয়।
৬. বাতিল এবং রক্ষণাবেক্ষণ:
ফাইনাল চেক: সমস্ত কন্টুর লাইনগুলি পুনরায় পরীক্ষা করা হয়। সবকিছু সঠিক হলে, মাঠটি বাতিল করা হয়।
রক্ষণাবেক্ষণ: সময় সময় মাঠের অবস্থার পরিবর্তন হলে গ্রেড কন্টুর রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
উপসংহার:
মাঠে গ্রেড কন্টুর স্থাপন একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়া, যা সঠিক তথ্য এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করে সম্পন্ন করতে হয়। এটি প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নির্মাণ কার্যক্রমের সফলতা নিশ্চিত করে।
 
 কন্টুর মানচিত্রের সাহায্যে কিভাবে পানি নিষ্কাশন প্রকল্প প্রণয়ন করিবে
(ক) পানি নিষ্কাশনের পরিমাণ নির্ণয়ঃ নিষ্কাশনের পরিমাণ নিষ্কাশন এলাকার আয়তনের উপর নির্ভরশীল। নিষ্কাশন এলাকা বেশি বা কম হইলে নিষ্কাশনের পরিমাণ বেশী বা কম হইবে। এই জন্য কন্টুর ম্যাপের উপর জল বিভাজিকা রেখা টানিয়া উহার মধ্যের সীমাবদ্ধ অববাহিকার ক্ষেত্রফল প্লানিমিটারের সাহায্যে মাপিয়া বাহির করা যায়। জলভিভাজিকা রেখা টানার সময় খেয়াল রাখিতে হইবে যে, উহার উভয় পার্শ্ব ঢালু থাকে।

(খ) নিষ্কাশন প্রণালীর গতিপথ নির্ণয়ঃ মানচিত্রে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বিন্দুগুলির অবস্থান চিহ্নিত করিতে হইবে। নিষ্কাশন প্রণালী যাহাতে প্রয়োজনীয় ঢাল বরাবর এবং সোজা থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখিয়া নিষ্কাশন প্রণালীর গতিপথ চিহ্নিত করিতে হইবে। কন্টুর রেখার আড়াআড়ি নিষ্কাশন প্রণালী স্থাপন করিলে সর্বোচ্চ ঢাল পাওয়া যাইবে তবে খেয়াল রাখিতে হইবে যাহাতে সর্বনিম্ন ঢাল ১৪৮০০ এর চাইতে কম না হয়।
 
ত্রিকোণমিতিক লেভেলিং বলিতে কি বুঝ? ইহা কোথায় এবং কেন ব্যবহার করা হয়?
 ইহা এক প্রকার পরোক্ষ লেভেলিং পদ্ধতি যেখানে লেভেল যন্ত্র ব্যবহার না করিয়া থিওডোলাইট যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে থিওডোলাইট দিয়া খাড়া কোন মাপিয়া এবং চেইন বা টেপ দিয়া অনুভূমিক দূরত্ব মাপিয়া বা হিসাব-নিকাশ করিয়া কোণ সুউচ্চ বস্তু বা বিন্দুর তুলনামূলক উচ্চতা তথা এলিভেশন নির্ণয় করা হয়। পাহাড়িয়া এলাকায় যেখানে সাধারণ লেভেলিং কাজ করা খুব কষ্টকর সেখানে এই পদ্ধতি সাধারণতঃ সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়।
 
ত্রিকোণমিতিক লেভেলিং-এর ব্যবহার:
দূরত্ব পরিমাপ: এই পদ্ধতিতে সাধারণত দূরত্ব এবং কোণ মাপা হয়, যা ত্রিকোণমিতি সূত্র ব্যবহার করে উচ্চতা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
ভূ-প্রকৃতির বিশ্লেষণ: ত্রিকোণমিতিক লেভেলিং ব্যবহার করে পাহাড়, নদী এবং অন্যান্য ভূ-প্রকৃতির উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়।
নির্মাণ প্রকল্প: নির্মাণ কাজের সময়, এই পদ্ধতি বিভিন্ন স্থানের উচ্চতা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে সাহায্য করে, যা সঠিক ভিত্তি স্থাপন এবং অন্যান্য নির্মাণ পরিকল্পনার জন্য অপরিহার্য।
মানচিত্র তৈরি: ভূগোল এবং টপোগ্রাফির মানচিত্র তৈরির সময় ত্রিকোণমিতিক লেভেলিং ব্যবহার করা হয় যাতে বিভিন্ন ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যায়।
কেন ব্যবহার করা হয়:
নির্ভুলতা: ত্রিকোণমিতিক লেভেলিং অত্যন্ত নির্ভুল পদ্ধতি, যা দূরবর্তী পয়েন্টের উচ্চতা সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সাহায্য করে।
অ্যাক্সেসিবিলিটি: কিছু এলাকায় সরাসরি লেভেলিং করা কঠিন হতে পারে, সেখানে ত্রিকোণমিতিক লেভেলিং সুবিধাজনক।
পরিমাপের গতি: তুলনামূলকভাবে দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে দূরত্ব ও উচ্চতা পরিমাপ করা যায়।
পদ্ধতি:
ত্রিকোণমিতিক লেভেলিং করার জন্য সাধারণত একটি থিওডোলাইট বা ট্রান্সিট ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যবহার করে একটি পয়েন্ট থেকে অন্য পয়েন্টের মধ্যে কোণ এবং দূরত্ব মাপা হয়, এবং ত্রিকোণমিতির সূত্র ব্যবহার করে উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়।
এইভাবে, ত্রিকোণমিতিক লেভেলিং একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি যা বিভিন্ন প্রকৌশল এবং ভূগোলের কাজে ব্যবহৃত হয়।
টোটাল স্টেশন ব্যবহার করে কনট্যুর জরিপ
টোটাল স্টেশন ব্যবহার করে কনট্যুর জরিপ একটি আধুনিক এবং কার্যকরী পদ্ধতি, যা জমির উচ্চতা এবং ভূমির বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে সহায়ক। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যা প্রকল্প পরিকল্পনা ও নকশায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে টোটাল স্টেশন ব্যবহার করে কনট্যুর জরিপের প্রক্রিয়া এবং সুবিধাসমূহ তুলে ধরা হলো:
টোটাল স্টেশন ব্যবহারের প্রক্রিয়া
প্রাথমিক প্রস্তুতি:
জরিপের জন্য সাইট পরিদর্শন করা হয় এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, যেমন টোটাল স্টেশন, ট্রিপড, এবং অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়।
জরিপের জন্য লক্ষ্য স্থান নির্ধারণ করা হয় এবং সেগুলোতে প্রাথমিক পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়।
পয়েন্ট স্থাপন:
টোটাল স্টেশন একটি কেন্দ্রীয় পয়েন্টে স্থাপন করা হয় এবং এটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় সেট করা হয়।
জরিপের সময় প্রয়োজনীয় লক্ষ্য পয়েন্টগুলি (বিভিন্ন উচ্চতার পয়েন্ট) চিহ্নিত করা হয়।
তথ্য সংগ্রহ:
টোটাল স্টেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে উচ্চতা এবং দূরত্বের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিটি পয়েন্টের উচ্চতা এবং স্থানাঙ্ক (X, Y, Z) সঠিকভাবে রেকর্ড করা হয়।
কনট্যুর লাইন তৈরী:
সংগ্রহিত তথ্যের ভিত্তিতে কনট্যুর লাইন তৈরী করা হয়, যা ভূমির উচ্চতার পরিবর্তন নির্দেশ করে।
কনট্যুর মানচিত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।
বিশ্লেষণ ও রিপোর্ট:
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয় এবং প্রকল্পের পরিকল্পনা ও ডিজাইন তৈরির জন্য রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়।
টোটাল স্টেশন ব্যবহারের সুবিধা
উচ্চ নির্ভুলতা:
টোটাল স্টেশন অত্যন্ত সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য প্রদান করে, যা কনট্যুর জরিপের জন্য অপরিহার্য।
দ্রুত তথ্য সংগ্রহ:
অন্যান্য জরিপ পদ্ধতির তুলনায় টোটাল স্টেশন ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
সহজ ব্যবহার:
টোটাল স্টেশন ব্যবহার করা সহজ, এবং জরিপকারীরা কম সময়ে বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
ডাটা প্রক্রিয়াকরণ:
সিস্টেমে সংগৃহীত তথ্য দ্রুত বিশ্লেষণ করা যায় এবং মানচিত্র তৈরি করতে সহায়ক হয়।
যন্ত্রের বহুমুখিতা:
টোটাল স্টেশন একাধিক ফাংশন সম্পাদন করতে পারে, যেমন দূরত্ব, উচ্চতা, এবং কোণের পরিমাপ।
উপসংহার
টোটাল স্টেশন ব্যবহার করে কনট্যুর জরিপ একটি কার্যকরী এবং নির্ভুল পদ্ধতি, যা প্রকল্প পরিকল্পনা, ডিজাইন, এবং নির্মাণের জন্য অপরিহার্য। এটি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও সঠিক করে তোলে।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *