সয়েল টেস্ট

কেন মাটি পরিক্ষার (সয়েল টেস্ট) করার প্রযোজন হয়?

ভূনিন্মস্থ মাটির নিরাপদ ভারবহন ক্ষমতা নিরুপনের জন্য সয়েল টেস্ট করা হয়।মনে রাখবেন যে কোন ধরনের স্থাপনা

যেমন, আবাসিক ভবন, বানিজ্যিক ভবন, স্কুল– কলেজ, মসজিদ – মন্দির, হাস্পাতাল শপিং কমপ্লেক্স ব্রিজ – কালভার্ট,

সড়ক মহাসড়ক, রেললাইন, এয়ারপোর্ট,পাওয়ার প্লান্ট ইত্যাদি ডিজাইনের জন্য সয়েল টেস্ট অপরিহার্য।

তবে আমাদের দেশের মাটির নিরাপদ ভারবহন ক্ষমতা বরগমিটারে ৯–১০ টন থাকে বলে প্রকৌশালীগন

সাধারণত Light Structure (এক দুই তলা ভবন) এর জন্য সয়েল টেস্ট রেফার করেন না।

এই হাল্কা ভবন গুলোর ফাউন্ডেশনে এর থেকে বেশি লোড আসে না। তবে অবশ্যই তিনের অধিক ভবনের জন্য Soil test জরুরী।

মনে রাখবেন Soil test ছাড়া ডিজাইন করা আর ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ খাওয়া একই কথা।

ইহা ছাড়া ভূনিম্নস্থ মাটির বৈশিষ্ট্য জানা কারো পক্ষে সম্ভব না। একমাত্র সয়েল টেস্ট রিপোর্ট দেখেই একজন প্রোকৌশলীর

পক্ষে সম্ভব স্থপনা সুরক্ষার জন্য কি ধরনের ফাউন্ডেশন প্রয়োজন।

আবাসিক ভবন করার জন্য সয়েল টেস্ট শুরুত্ত

নির্মানকাজ শুরুর আগেই, বিশেষত ডিজাইন করার আগেই এটা করা হয়।

কারন ফাউন্ডেশন ডিজাইন এর জন্য এটি একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এটার মুল উদ্দেশ্য হলো মাটির

‘বিয়ারিং ক্যাপাসিটি’ বা ‘ভারবহন ক্ষমতা’ নির্ণয় করা। আবার, ফাউন্ডেশনের ধরন সম্পর্কেও সয়েল টেস্ট এর মাধ্যমে ধারণা পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, ফাউন্ডেশন শ্যালো বা অগভীর হবে ( যেমনঃ ফুটিং ) নাকি ডিপ বা গভীর হবে ( যেমনঃ পাইলিং ) তা বোঝা যায়।
এই ‘বিয়ারিং ক্যাপাসিটি’ এবং ‘ফাউন্ডেশন টাইপ’ সয়েল টেস্ট রিপোর্টে উল্লেখ থাকে। সয়েল টেস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী

ফাউন্ডেশন ডিজাইন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এস.পি.টি., সয়েল টাইপ, স্ট্রাটিফিকেশন, বিভিন্ন টেস্ট রেজাল্ট, বোরিং পয়েন্ট লেআউট ইত্যাদি রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সয়েল টেস্ট না করলে ফাউন্ডেশন ডিজাইন অসম্ভব। সঠিক ফাউন্ডেশন ডিজাইন না থাকলে স্থাপনা সেটেল করা

বা দেবে যাবার সম্ভাবনা থাকে যা পরবর্তিতে ক্র্যাক বা ফাটল সৃষ্টি করে স্থাপনার জন্য ক্ষতি বা হুমকিস্বরূপ হয়ে দাড়াতে পারে।

আবার যে সব এলাকায় মাটি দুর্বল সেখানে সঠিকভাবে পাইলিং ডিজাইন করার জন্য সয়েল টেস্ট প্রয়োজন।

ভূমিকম্পের প্রভাব প্রতিরোধে সঠিকভাবে পাইলিং করতে হয়।

সয়েল টেস্ট

সয়েল টেস্ট কিভাবে করা হয়?

আমাদের দেশে সাধারনত ওয়াশ বোরিং পদ্ধতিতে সয়েল ইনভেস্টিগেশনের কাজ করা হয়। এই পদ্ধতিতে পানির সাহায্যে ২” ব্যাসের পাইপকে হ্যামারিং করে মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো হয়। প্রতি ৫ ফুট বা ১.৫ মিটার পর পর মাটির নমুনা এবং ঘাতের সংখ্যা উন্ট করা হয়।
প্রতি ৫ ফুট পর পর পরবর্তী ১.৫ ফুট বা ১৮ ইঞ্চি পাইপ মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো সময় N এর মান লিপিবদ্ধ করতে হয়, তবে এই ১৮ ইঞ্চির মধ্যে প্রথম ৬ ইঞ্চির জন্য ঘাত সংখ্যা বিবেচনায় নেওয়া হয়না।
অর্থাৎ পরবর্তী ১২ ইঞ্চি প্রবেশের জন্য যতগুলো আঘাতের প্রয়োজন হয় সেই সংখ্যাই হলো N এর মান। যদি ১২ ইঞ্চি ঢুকাতে ১৫ বার ঘাতের প্রয়োজন হয় তবে N এর মান হবে ১৫। এই N এর মান মাটির লেয়ার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়, যেমন প্রথম ১০–১৫ ফুটের মধ্যে N এর মান থাকে খুবই কম হয়।
N এর মান ১৫ এর উপরে পেলে বুঝতে হবে শক্ত মাটি লেয়ার

সয়েল টেস্ট

সয়েল টেস্ট করার সময় সর্তকতা সমূহ কি কি?

হ্যামারের ওজন ৬৩.৫ কেজি কিনা নিশ্চিত করতে হবে এবং ইহা ৩০ ইঞ্চি উচ্চতা থেকে ড্রপিং হচ্ছে কিনা?
প্রতি ৫ ফুট পর পর আলাদা আলাদ প্যাকেটে নমুনা মাটি সংরক্ষন করছে কিনা?
N Value সঠিকভাবে কাউন্ট এবং লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে কিনা?
মাটি ভাল থাকলেও কমপক্ষে ৬০ ফুট পর্যন্ত স্যাম্পল কালেকশন করা উত্তম সয়েল টেস্ট।

১. সাইট বা প্লট পরিদর্শন ও জরিপ করা।
২. ফিল্ডের অবস্থা অনুযায়ী বোরিং সংখ্যা ও স্থান নির্বাচন করা এবং সেই অনুযায়ী বোরিং কাজ সম্পন্ন করা।
৩. প্রয়োজন অনুযায়ী বোরিং গভীরতা নির্ধারণ করা।
৪. প্রত্যেক বোরিং স্থানে মাটির অক্ষত এবং বিক্ষত নমুনা সংগ্রহ করা এবং ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করা।
৫. বোরিং বা ড্রিলিং-এর সাহায্যে ৫ ফুট অন্তর মাটির এস.পি.টি (S.P.T) ভ্যালু নির্ণয় করা এবং মাটির নিরাপদ ভারবহন ক্ষমতা (সেফ বিয়ারিং ক্যাপাসিটি) বের করা।
৬. সয়েল টেস্ট ও ফিল্ড টেস্ট এবং ল্যাব টেস্টেও ফলাফল বের করা।
৭. অবশেষে মাটি পরীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরী করা এবং সেই অনুযায়ী বাড়ির ফাউন্ডেশন সম্পর্কে মন্তব্য করা।

ল্যান্ড সার্ভে

মাটি পরীক্ষার টেস্ট সাধারণত দুই প্রকার

১. মাটির ফিল্ড টেস্ট ও সয়েল টেস্ট

ক. প্লেট লোড বেয়ারিং টেস্টঃ ইহা সাধারণ যন্ত্র পরিচালিত পদ্ধতি যা দ্বারা মাটির যে কোন স্তরে চূড়ান্ত বেয়ারিং ক্যাপাসিটি এবং মাটির সংকোচন মাপা যায় বা নির্ণয় করা যায়। অধিকিন্তু এই টেস্ট দ্বারা নির্ণীত ফলাফল তুলনা এবং সত্যতা যাচাই করা যায়।
খ. এস.পি.টি (S.P.T ) টেস্টঃ এস.পি.টি ( S.P.T = Standard Penetration Test) – এর মাধ্যমে মাটির এন (ঘ) ভ্যালু Value () যেমন নির্ণয় করা যায় তেমনি সংগৃহীত মাটির নমুনা Soil (Sample)
ল্যাবরেটরীতে টেস্ট করা হয়। ফিল্ডে প্রতিটি বোরিং ৫ ফুট পর পর এন (ঘ) ভ্যালু Value() নির্ণয় করা হয়, যাহা মাটির ভারবহন ক্ষমতা সরাসরি দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
বি :দ্র : এস.পি.টি (S.P.T ) ভ্যালুর সাহায্যে ফিল্ডে সরাসরি মাটির ভারবহন ক্ষমতা (বেয়ারিং ক্যাপাসিটি) নির্ণয় এবং পরীক্ষা করা যায়।
২. মাটির ল্যাব টেস্টঃ

ASTM – অনুযায়ী মাটির ল্যাব টেস্টসমূহ সাধারণত নিম্নরুপঃ
ক) ময়েশ্চার কনটেন্ট টেস্ট
খ) প্লাস্টিসিটি টেস্ট
গ) আপেক্ষিক গুরুত্ব টেস্ট
ঘ) ঘনত্ব টেস্ট
ঙ) কনসোলিডেশন টেস্ট
চ) ডাইরেক্ট শেয়ার টেস্ট, ইত্যাদি।
সয়েল টেস্ট কাদের দিয়ে করাবেন

যাদের নিজস্ব ল্যাব রয়েছে এবং
অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সয়েল প্রকৌশলী রয়েছে।